Sunday, August 9, 2015

আহত কলম

(আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়ত ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ - কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবল ভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব, ওনাদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কথাগুলো পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায়েই সা্রা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কীবোর্ডে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য - তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে।)
--------------------

আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাত বছর আগে যখন আমি এই ব্লগটা লিখতে শুরু করি তখন ব্লগের প্রথম পোস্টে লিখেছিলাম,

I will write about the earth and the sea, I will write about the winter and the autumn, I will write about the mountain and the desert, I will write about Tiger Prawn and Paav bhaji, I will write about the casinos of Las Vegas and slums of Kolkata, I will write about Harry Potter's wand and Sherlock Holmes' pipe, I will write about Marlon Brando and Rajinikanth, I will write about friendship and love, I will write about the Taj Mahal and the Pyramids, I will write about George Bush and Steve Bucknor. I will write about life and death.

এখন এটা পড়লে মনে হয় ঐ সময় উদ্ধতভাবে এই ঘোষণা করা ঠিক হয়নি। কিন্তু তখন বয়স অল্প ছিল, হয়তো সময়টাও অন্য রকম ছিল, তাই মনে মনে ভাবতাম, যে কোন মানুষ নিজের ব্লগে, নিজের অন্তরঙ্গ মুহূর্তে নিজের ইচ্ছে মত যা খুশী লিখতে পারে।
কিন্তু আজ আমি জানি যে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই ভাবনাটাই প্রচণ্ড বড় ভুল। আজ ভারতীয় উপমহাদেশে বসে (হয়তো পৃথিবীর যেকোন জায়গাতে বসেই) নিজের ইচ্ছে মত যেকোন বিষয় নিয়ে আর লেখা যায় না। নিজের ইচ্ছে হলেই ধর্মের অসারতা, মৌলবাদ, কুসংস্কার, রাজনৈতিক নেতাদের শঠতা, ব্যবসায়ীদের মুনাফা লোটার ভাঁওতাবাজি নিয়ে কলম ধরা যায় না। তবু যারা সাহস করে লিখে যান তাঁদের মূল্য চোকাতে হয় নিজেদের রক্ত দিয়ে।
রাজীব, অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, অনন্ত, নীলাদ্রিরা শুধু চেয়েছিলেন তাঁদের ভাবনাকে নিজেদের লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার। তাঁদের লেখার প্রধান বিষয় ছিল ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারের কুপ্রভাব। আর তাই একের পর এক কিছু বুদ্ধিভ্রষ্ট, ধর্মান্ধ ঘাতকের চপার নেমে এসেছে তাঁদের ওপর।
(সূত্রঃ www.facebook.com/bongpen.net)
কিছু মানুষ (হ্যাঁ, এরা মানুষই... অস্বীকার করার জায়গা নেই) এবং তাদের কার্যকলাপ আজ মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাচ্ছেশুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লাগার অজুহাতে একের পর এক মানুষ মারতে এদের আটকায় না। প্রশাসন এদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম। আর আমরা, সাধারণ মানুষ কাঁটাতারের বেড়ার এদিকে বসে নিজেদের ল্যাপটপে একের পর এক ঘটনার খবর দেখতে দেখতে ক্লান্ত। প্রথমে আমাদের রাগ হয়েছিল, মনে হয়েছিল ফেসবুকে, মিছিলে প্রতিবাদ করে এর প্রতিরোধ করা যাবে। কিন্তু এখন আমরা জানি আমাদের জমে থাকা রাগের কোন মূল্য নেই, ফেসবুকে হাজার হাজার আপডেট দিয়ে, পোস্ট দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তাই আমাদের সেই রাগ ক্রমেই আশঙ্কায় পরিণত হচ্ছে। আজ সত্যিই ভয় পাওয়ার জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি আমরা।
কারণ আমি জানি এইভাবে একের পর এক হত্যা করেও লেখকের কলমকে থামানো যায় না। তাই এই অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লেখা থেমে থাকবে না। কিছু সাহসী, মুক্তমনা মানুষ বারবার তাঁদের যুক্তির বেড়াজালে ধর্মীয় কুসংস্কারের নগ্ন স্বরূপ তুলে ধরবেন। আমরা তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব। মনপ্রাণ দিয়ে তাঁদের সমর্থন করব। কিন্তু আমাদের মনের এক কোণায় সব সময় জমে থাকবে ভয়। আবার কয়েক মাস পর হয়তো পরবর্তী মৃত্যুর বর্ণনা শুনে শিউরে উঠতে হবে আমাদের।

প্রথম ব্লগে আরও একটা ভুল লিখেছিলাম। ‘মৃত্যু’ নিয়ে লেখা মোটেই সহজ কাজ নয়।

--------------------

No comments:

Post a Comment

"It’s always very easy to give up. All you have to say is ‘I quit’ and that’s all there is to it. The hard part is to carry on”